কম্পিউটার কি? কম্পিউটারের জনক কে? বিভিন্ন অংশের নাম ও কাজ ? সকল তথ্য দেখতে এখানে ক্লিক করুন ?
কম্পিউটার কি?
কম্পিউটার হল একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা তথ্য (ডেটা) প্রক্রিয়া করতে পারে এবং ফলাফল প্রদর্শন করতে সক্ষম। এটি নির্দেশনা বা প্রোগ্রাম অনুসরণ করে জটিল গণনা, ডেটা প্রক্রিয়াকরণ, এবং বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদন করতে পারে। কম্পিউটারের প্রধান কাজ হলো ইনপুট নেওয়া, তা প্রক্রিয়া করা এবং আউটপুট প্রদান করা।
কম্পিউটার কাকে বলে?
কম্পিউটার হলো একটি আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা ডেটা প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ এবং ফলাফল প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি মানুষের নির্দেশনা বা প্রোগ্রাম অনুযায়ী কাজ করে। কম্পিউটার মূলত তথ্য সংগ্রহ (ইনপুট), প্রক্রিয়া (প্রসেসিং), এবং ফলাফল (আউটপুট) প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করে।
কম্পিউটার শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ “computare” থেকে, যার অর্থ হলো গণনা করা। তবে বর্তমানে এটি শুধু গণনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি ডেটা ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ, গবেষণা, এবং বিনোদনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
কম্পিউটারের প্রধান কাজ
১. ইনপুট: ব্যবহারকারীর থেকে তথ্য গ্রহণ।
২. প্রসেসিং: সিপিইউ (CPU) বা প্রসেসর দ্বারা ডেটা প্রক্রিয়া করা।
৩. আউটপুট: প্রক্রিয়াকৃত তথ্য মনিটর বা প্রিন্টারের মাধ্যমে দেখানো।
৪. স্টোরেজ: তথ্য সংরক্ষণ।
কম্পিউটারের জনক কে?
চার্লস ব্যাবেজ (Charles Babbage)-কে কম্পিউটারের জনক বলা হয়। তিনি একজন ইংরেজ গণিতবিদ, আবিষ্কারক, এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ১৮২২ সালে তিনি প্রথমবারের মতো "ডিফারেন্স ইঞ্জিন" নামে একটি মেকানিক্যাল কম্পিউটারের ধারণা দেন, যা জটিল গাণিতিক হিসাব করতে সক্ষম ছিল।
এরপর ১৮৩৭ সালে চার্লস ব্যাবেজ আরও উন্নত মডেল "অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন" ডিজাইন করেন, যা আধুনিক কম্পিউটারের ভিত্তি গড়ে তোলে। এই যন্ত্রটি ইনপুট, প্রসেসিং, মেমরি, এবং আউটপুট—এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ অন্তর্ভুক্ত করেছিল।
চার্লস ব্যাবেজের অবদান
১. ডিফারেন্স ইঞ্জিন: এটি জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধানে সক্ষম প্রথম মেকানিক্যাল ডিভাইস।
২. অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন: এটি প্রথম প্রোগ্রামেবল কম্পিউটারের ধারণা দেয়।
৩. অ্যালগরিদমের প্রয়োগ: ব্যাবেজের যন্ত্রে লেডি অ্যাডা লাভলেস (Ada Lovelace) প্রথম অ্যালগরিদম লিখেন, যাকে প্রথম প্রোগ্রামার বলা হয়।
আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে?
আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে?
অ্যালান টিউরিং (Alan Turing)-কে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়। তিনি একজন ব্রিটিশ গণিতবিদ, লজিশিয়ান, এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী ছিলেন। টিউরিং কম্পিউটিংয়ের তত্ত্বের ভিত্তি স্থাপন করেন, যা আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির মূল ধারণা।
১৯৩৬ সালে টিউরিং তার "টিউরিং মেশিন" তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, যা একটি ধারণাগত যন্ত্র ছিল, যা অংক গণনা করতে সক্ষম। এই মেশিনটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল যে, এটি কোনও প্রোগ্রাম অনুসরণ করে নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে পারে—যা কম্পিউটারের কার্যপদ্ধতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
এছাড়াও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে টিউরিং তার প্রকল্প "এনিগমা কোড" ভাঙ্গার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা জার্মানদের কোডিং সিস্টেমে ব্যবহৃত ছিল।
অ্যালান টিউরিংয়ের অবদান
১. টিউরিং মেশিন: এটি কম্পিউটারের মৌলিক ধারণার ভিত্তি।
২. টিউরিং টেস্ট: এটি একটি পরীক্ষামূলক পদ্ধতি যা মেশিনের বুদ্ধিমত্তা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়।
অ্যালান টিউরিংয়ের গবেষণার ফলে আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ সম্ভব হয়েছে। এজন্য তাকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়।
কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের নাম ও কাজ ?
কম্পিউটার মূলত কয়েকটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত, যেগুলি একসাথে কাজ করে ডেটা প্রক্রিয়া এবং ফলাফল প্রদানে সাহায্য করে। এই অংশগুলির মধ্যে প্রধান প্রধান হলো:
-
সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (CPU):
CPU বা প্রসেসর কম্পিউটারের "মস্তিষ্ক" হিসেবে পরিচিত। এটি ইনপুট ডেটা প্রক্রিয়া করে এবং নির্দেশনা অনুযায়ী ফলাফল তৈরি করে। এর কাজ হলো গণনা, লজিক্যাল অপারেশন এবং ডেটা ট্রান্সফার। -
র্যাম (RAM - Random Access Memory):
এটি একটি অস্থায়ী মেমরি যেখানে কম্পিউটার বর্তমান কাজের তথ্য সংরক্ষণ করে। র্যাম দ্রুত অ্যাক্সেসযোগ্য হওয়ায় এটি কার্যকরভাবে কাজের গতি বাড়ায়। -
হার্ড ডিস্ক (Hard Disk):
এটি স্থায়ী স্টোরেজ ডিভাইস, যেখানে সব ধরনের তথ্য, ফাইল এবং সফটওয়্যার সংরক্ষণ করা হয়। -
মাদারবোর্ড (Motherboard):
এটি একটি সर्कিট বোর্ড, যেখানে CPU, RAM, স্টোরেজ ডিভাইস, এবং অন্যান্য উপাদান সংযুক্ত থাকে। এটি কম্পিউটারকে একসাথে কাজ করতে সাহায্য করে। -
মনিটর:
এটি কম্পিউটারের আউটপুট ডিভাইস, যা প্রক্রিয়া করা তথ্য প্রদর্শন করে। -
কিবোর্ড এবং মাউস:
কিবোর্ড ইনপুট ডিভাইস হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা টেক্সট বা কমান্ড ইনপুট দেয়। মাউস এক্সটার্নাল ইনপুট ডিভাইস, যা পয়েন্টিং এবং ক্লিকিং অপারেশন করতে ব্যবহৃত হয়।
এই অংশগুলি একত্রিত হয়ে কম্পিউটারকে কাজ করতে সক্ষম করে ।
কম্পিউটার ভাইরাস কি?
কম্পিউটার ভাইরাস হলো একটি ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম বা কোড যা কম্পিউটারের সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেকে অন্যান্স প্রোগ্রামে ছড়িয়ে দেয়। এটি কম্পিউটারের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নষ্ট বা চুরি করতে পারে। ভাইরাস সাধারণত একটি ফাইল বা প্রোগ্রামের মাধ্যমে কম্পিউটারে প্রবেশ করে এবং একবার সক্রিয় হলে এটি সিস্টেমের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
কম্পিউটার ভাইরাসের কাজ
১. ফাইল ক্ষতি করা: ভাইরাস ফাইলের মধ্যে প্রবেশ করে তথ্য নষ্ট করতে পারে বা সেগুলিকে পরিবর্তন করে ফেলতে পারে।
২. সিস্টেম ধ্বংস করা: ভাইরাস সিস্টেমের কাজ বন্ধ করে দিতে পারে, যেমন সফটওয়্যার বা অপারেটিং সিস্টেম ক্র্যাশ হয়ে যাওয়া।
৩. ডেটা চুরি করা: ভাইরাস সিস্টেমের মধ্যে গোপনে তথ্য চুরি করে বা তথ্য পাঠিয়ে দিতে পারে।
৪. প্রোগ্রাম লুকানো: ভাইরাস নিজের উপস্থিতি লুকিয়ে রেখে সিস্টেমের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো দুটি বা তার বেশি কম্পিউটার বা ডিভাইসের সংযোগ, যা একে অপরের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করতে সক্ষম। নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন কম্পিউটার একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয়ে ফাইল শেয়ারিং, ইন্টারনেট ব্যবহার, প্রিন্টার শেয়ারিং, এবং অন্যান্য রিসোর্স ব্যবহার করতে পারে। নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস যেমন রাউটার, সুইচ, হাব, এবং কেবলের প্রয়োজন হয়।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ধরন
১. LAN (Local Area Network): এটি এক নির্দিষ্ট জায়গায় বা ছোট এলাকায় যেমন অফিস বা বাড়িতে ব্যবহৃত হয়।
২. WAN (Wide Area Network): এটি একটি বড় এলাকার মধ্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন বিভিন্ন শহর বা দেশভিত্তিক যোগাযোগ।
৩. MAN (Metropolitan Area Network): এটি শহরের বা বড় এলাকার মধ্যে ব্যবহৃত হয়।
৪. PAN (Personal Area Network): এটি ব্যক্তিগত ডিভাইস যেমন স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, এবং ট্যাবলেটের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।
নেটওয়ার্কের সুবিধা
- তথ্য শেয়ারিং: কম্পিউটারের মধ্যে ডেটা শেয়ার করা সহজ হয়।
- রিসোর্স শেয়ারিং: প্রিন্টার, ফাইল, এবং ইন্টারনেট সংযোগ শেয়ার করা যায়।
- কমিউনিকেশন: নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দ্রুত এবং কার্যকরীভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক আমাদের কাজকে আরও দ্রুত, সহজ এবং কার্যকরী করে তোলে।