বাংলাদেশে পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় নথি ও প্রক্রিয়া
বাংলাদেশে পাসপোর্ট করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়াটি সহজ করার জন্য এখানে ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হলো।
পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র
পাসপোর্ট তৈরির জন্য আবেদনকারীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জমা দিতে হয়। এগুলো নির্ভুলভাবে প্রস্তুত রাখলে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত হয়।
১. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID):
- ১৮ বছরের বেশি বয়সী আবেদনকারীদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক।
- যদি আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের কম হয়, তবে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন।
২. ছবি:
- পাসপোর্ট অফিসে ছবি তোলার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকে।
- অনলাইন আবেদন করলে নির্ধারিত ফরম্যাট অনুযায়ী ছবি আপলোড করতে হবে।
৩. ঠিকানার প্রমাণপত্র:
যেমন:
- বিদ্যুৎ বা গ্যাস বিল।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
- বাড়ির ভাড়ার কাগজপত্র বা জমির দলিল (যদি প্রাসঙ্গিক হয়)।
৪. বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র:
- ১৮ বছরের কম বয়সী আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের NID এর ফটোকপি প্রয়োজন।
৫. পুরোনো পাসপোর্ট (যদি থাকে):
- পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করলে পুরোনো পাসপোর্ট জমা দিতে হবে।
৬. অন্যান্য প্রমাণপত্র (যদি প্রয়োজন হয়):
যেমন শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স (বিশেষ ক্ষেত্রে)।
পাসপোর্ট তৈরির ধাপসমূহ
ধাপ ১: অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করা
- প্রথমে www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ইত্যাদি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
- ফরম পূরণ শেষে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে।
ধাপ ২: ফি পরিশোধ করা
পাসপোর্ট তৈরির জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিতে হয়। এটি পাসপোর্টের ধরনের ওপর নির্ভর করে।
- নিয়মিত পাসপোর্ট ফি: ৩,৪৫০ টাকা।
- জরুরি পাসপোর্ট ফি: ৬,৯০০ টাকা।
- অত্যন্ত জরুরি পাসপোর্ট ফি: ১০,৩৫০ টাকা।
ফি পরিশোধ করতে ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।
ধাপ ৩: বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করা
অনলাইনে আবেদন করার পর নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ এবং স্বাক্ষর দিতে হয়।
ধাপ ৪: নথি যাচাই
পাসপোর্ট অফিসে আপনার জমাকৃত নথি যাচাই করা হবে। যদি নথিপত্রে কোনো ভুল বা জালিয়াতি পাওয়া যায়, তবে আবেদন বাতিল হতে পারে।
ধাপ ৫: পাসপোর্ট সংগ্রহ করা
নথি যাচাই সম্পন্ন হলে পাসপোর্ট তৈরি করা হয়। প্রস্তুত হলে SMS এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে নিজ হাতে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে।
পাসপোর্টের ধরন ও মেয়াদ
- পাসপোর্ট সাধারণত দুই ধরনের হয়:
১. ই-পাসপোর্ট: আধুনিক এবং নিরাপদ পাসপোর্ট।
২. মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP): পুরোনো প্রযুক্তি নির্ভর পাসপোর্ট। - মেয়াদ সাধারণত ৫ বছর বা ১০ বছর হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
১. পাসপোর্ট সংশোধন:
যদি পাসপোর্টে কোনো তথ্য ভুল থাকে, তবে এটি সংশোধনের জন্য আবেদন করা যায়।
২. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স:
বিদেশি কিছু দেশে ভিসার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হতে পারে।
৩. ব্র্যাকলিস্টেড তথ্য এড়ানো:
ভুল তথ্য প্রদান বা জাল নথি জমা দিলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
৪. ভ্রমণের প্রস্তুতি:
পাসপোর্ট তৈরি হলে এটি দিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। পাসপোর্ট নিজে শুধুমাত্র একটি পরিচয়পত্র, ভিসা ছাড়া এটি ভ্রমণের জন্য যথেষ্ট নয়।
সতর্কতা ও পরামর্শ
- সব নথি নির্ভুল এবং প্রাসঙ্গিক হওয়া জরুরি।
- নথি পূরণে অসতর্কতা করলে আবেদন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে।
- অনলাইন আবেদন করার সময় নির্ভুল তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করুন।
এই নির্দেশনা অনুসরণ করে সহজেই বাংলাদেশে পাসপোর্ট তৈরি করতে পারবেন।